একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ইফতেখারুজ্জামান রনির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মশিউর রহমানের। দুই বন্ধু মিলে প্রথমে পোশাক কারখানার ত্রুটিপূর্ণ টি–শার্ট সংগ্রহ করে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় বিক্রি করতেন। পরে অনলাইনে ‘আকাশ নীল’ নামে শাকসবজির হোম ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করেন । তবে করোনার কারণে সেই ব্যবসায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। এক সময় ওই ব্যবসাটি বন্ধ করে শুরু করেন ই-কমার্স ব্যবসা। লোভনীয় অফারের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। সেই টাকাতেই নিজের বিলাসী জীবনযাপন করতে থাকেন। শুধু তাই নয়, গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে দুবাই পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মশিউর।

সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাব জানায়, প্রতারণা ও হুমকির অভিযোগে এক গ্রাহকের করা মামলায় র‌্যাব রোববার রাজধানী ঢাকা ও ফরিদপুর থেকে ‘আকাশ নীলের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মশিউর রহমান (২৮) এবং পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রনিকে (৩২) গ্রেফতার করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যবসা প্রশাসনে (বিবিএ) পড়াশোনা শেষ করে ২০১৯ সালে ‘আকাশ নীল’ নামের কোম্পানি নাম দিয়ে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ খুলে শুরু করেন নিত্যপণ্য ও শাকসবজির হোম ডেলিভারি শুরু করেন দুই বন্ধু।

পরে ই–কমার্স কোম্পানি ‘ইভ্যালি’ ও ‘ধামাকা শপিংয়ের’ ব্যবসা দেখে তারা ২০২১ সালের মে মাসে ‘আকাশ নীল’ ই–কর্মাস ব্যবসা শুরু করেন বলে র্যাংবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে।
র্যা ব জানায়, সাত মাসে ২৩–৩০ শতাংশ ছাড়ে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ‘আকাশ নীল’ ।

টাকা নিয়ে পণ্য না দিয়ে গত নভেম্বরে অফিস বন্ধ করে ‘আকাশ নীলের’ কর্মকর্তারা পালিয়ে যান বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

প্রতারণার শিকার এক গ্রাহক গত শুক্রবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় প্রতারণা ও হুমকির অভিযোগে বাদী হয়ে কোম্পানিটির নয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যা ব। ওই মামলায় রোববার মশিউর ও রনিকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়।

এ ব্যাপারে র্যা বের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে দুবাই পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মশিউর। তার কাছ থেকে দুবাইয়ে যাওয়ার একটি বিমানের টিকিট পাওয়া গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যােবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহক তাদের কাছে ৩০ কোটি টাকা পান বলে স্বীকার করেছেন মশিউর ও রনি। তাদের চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংক হিসাবের তথ্য যাচাইবাছাই করে গ্রাহকেরা কত টাকা পাবেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। কোনো টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে শুধু ওই দুইজনই নন, তাদের আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবও বিলাসবহুল জীবনযাপন শুরু করেন। মশিউরের বাবা ছিলেন কারখানার শ্রমিক। তার বসতভিটা ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। ই–কর্মাস কোম্পানি খুলে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি ব্যবহার শুরু করেন মশিউরের বাবা।

র্যা ব জানায়, ‘আকাশ নীলকে’ পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেন মশিউর। কোম্পানিটির এমডি ও সিইও নিজে হলেও চেয়ারম্যান ছিলেন তার মা। আর স্ত্রীকে করেছিলেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার বা অংশীদার। অন্য পদেও ছিলেন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব আরও জানায়, গ্রাহকের টাকায় ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন মশিউর, যার বাজারমূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। দুটি দামি গাড়ি কিনে ব্যবহার করতেন তিনি। এ ছাড়া কোম্পানির প্রায় চারটি পিকআপ রয়েছে। ‘আকাশ নীলের’ ৪০ জন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন, যাদের মাসিক বেতন ছিল চার–পাঁচ লাখ টাকা।